WIKI KOLKATA

সংগীতাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য – কসবা সুরঞ্জনীর আয়োজনে এক অনন্য সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা

16.74K ইভেন্ট 3 months ago

১৪ জুলাই, ২০২৫

গত ১০ই জুলাই কলকাতার রবীন্দ্র সদন প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হল এক মনোজ্ঞ ও হৃদয়গ্রাহী অনুষ্ঠান – সংগীতাচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কসবা সুরঞ্জনীর বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য অনুষ্ঠান। গুরুপূর্ণিমার এই পবিত্র দিনে তাঁর একনিষ্ঠ শিষ্যা ও সঙ্গীত বিশারদা রীণা মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই স্মরণীয় সন্ধ্যার আয়োজন সংগীত প্রেমীদের মধ্যে এক গভীর অনুরণন সৃষ্টি করে।

শান্তিনিকেতনের সুরে সূচনা

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে শ্রোতারা প্রত্যক্ষ করেন শান্তিনিকেতনের তিন বিশিষ্ট শিল্পী – প্রশান্ত ঘোষ, প্রলিপ্ত ঘোষ ও পলাশী ঘোষের কণ্ঠে পরিবেশিত সাতটি মননশীল গান। তাঁদের সুরের মূর্ছনা, গায়কীর নিখুঁত পরিমিতি ও ভাবপ্রবণতা শ্রোতাদের মন জয় করে নেয়। শান্তিনিকেতনের স্বকীয় ঘরানায় গাওয়া এই গানগুলি যেন অতীতকে নতুন করে অনুভব করার এক জানালা খুলে দেয়।

“আমার আপন গান” – এক শ্রদ্ধার্ঘ্য

দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব “আমার আপন গান” – যা ছিল সংগীতাচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারের জীবন ও তাঁর স্বরলিপির উপর ভিত্তি করে এক সুসংগঠিত শ্রদ্ধার্ঘ্য। পরিকল্পনা, বিন্যাস ও পরিচালনায় ছিলেন রীণা মুখোপাধ্যায়। স্বনামধন্য বাচিক শিল্পী দেবাশিস বসু ও রীণা মুখোপাধ্যায়ের প্রাণবন্ত ও আবেগপূর্ণ পাঠ অনুষ্ঠানটিকে ভাবগম্ভীরতা প্রদান করে।

এই পর্বে পরিবেশিত হয় একক, দ্বৈত ও সমবেত সংগীত, যার প্রতিটি পরিবেশনায় ছিল সুরের শুদ্ধতা ও ভাবের গভীরতা। একক সংগীতে অংশ নেন মালিকা চক্রবর্তী, মৌসুমী মন্ডল, দীপাঞ্জন পাল, সায়ন মিত্র, প্রীতম চক্রবর্তী ও রীণা মুখোপাধ্যায় নিজে। ভাস্বতী ভট্টাচার্য ও চন্দনা সামন্তের একক গাওয়া গানগুলো পরে সমবেত কণ্ঠে রূপান্তরিত হয়ে শ্রোতাদের বিশেষভাবে আপ্লুত করে।

দ্বৈত সংগীতে অংশ নেন বাসব ঘোষ-লেখা বিশ্বাস, দীপাঞ্জন পাল-সিদ্ধার্থ বিশ্বাস, অভিরূপ গুহ-তপশ্রী রায়, রাজশীর্ষ দাস-রূপশীর্ষ দাস। প্রতিটি পরিবেশনায় মেলে ধরা হয় নিখুঁত সম্মিলন ও আন্তরিকতা।

নৃত্য ও আলোকসজ্জার মাধুর্য

পল্লবী রুজের নির্দেশনায় অনুষ্ঠানে ছিল হৃদয়গ্রাহী নৃত্যানুষ্ঠান, যা গানের ভাবকে দৃশ্যরূপে তুলে ধরে দর্শকদের অভিভূত করে তোলে। সেই সঙ্গে ছিল পরিশীলিত মঞ্চসজ্জা, আলো ও ধ্বনির নিখুঁত সমন্বয় – যা পুরো পরিবেশনায় যোগ করে এক আলাদা মাত্রা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সংগীতবোদ্ধা শ্রী অনুপ মতিলাল। তিনি রীণা মুখোপাধ্যায় ও তাঁর দলের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এই প্রজন্মের কাছে সংগীতাচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারের ভাবনা ও সৃষ্টিকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই প্রয়াসকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন।


এই অনুষ্ঠান নিঃসন্দেহে এক স্মরণীয় সন্ধ্যা হয়ে থাকবে কলকাতার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে। রীণা মুখোপাধ্যায়ের সৃজনশীলতা, নিষ্ঠা ও গুরুভক্তি যেমন প্রশংসার দাবি রাখে, তেমনি তাঁর উদ্যোগে কসবা সুরঞ্জনী যে কৃতজ্ঞতার সাথে গুরুর উত্তরাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাল, তা ভবিষ্যতের সাংস্কৃতিক উদ্যোগগুলির জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

Latest Update